শাবনুর এর খারাপ ভিডিও দেখতে 👉 ক্লিক করুন
শাবনুরের প্রথম ছবি ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এহতেশাম পরিচালিত চাঁদনী রাতে। এহতেশামের নায়িকা মানেই বিশেষ কিছু। তখন পর্যন্ত তাঁর সব আবিষ্কার শবনম, শাবানা, শাবনাজ সবাই সুপারহিট। ঢাকাই ছবিতে সেটা ছিল নতুনের জয়জয়কারের যুগ। এহতেশামের আগের ছবিটিই (চাঁদনী) নতুন জুটি শাবনাজ-নাঈমকে নিয়ে রেকর্ড ব্যবসা করেছে। চাঁদনী রাতের কয়েক মাস আগে মুক্তি পায় কেয়ামত থেকে কেয়ামত এবং মৌসুমী এক ছবি দিয়েই এক নম্বর নায়িকা হিসেবে আবির্ভুত হন। সবাই ধারনা করছিলেন, চাঁদনী রাতেও সুপার-ডুপার হিট হবে আর শাবনুর মৌসুমীর একজন যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।
ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এর ব্যবসা এতই খারাপ ছিল যে এর নায়ক সাব্বিরকে আর কখনোই কোন ছবিতে দেখা যায়নি। এর সঙ্গীত পরিচালক মাইলসের মানাম আহমেদ আর কোন ছবিতে সুরকারের কাজ পাননি। এমনকি এহতেশামের মত কিংবদন্তিতুল্য পরিচালকও এর ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেননি।
কিন্তু শাবনুর ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছেন এবং বছর না ঘুরতেই মৌসুমী কে সরিয়ে পরিনত হয়েছিলেন এক নম্বর নায়িকায়। কেয়ামত থেকে কেয়ামত এবং অন্তরে অন্তরে ছবিতে একসাথে কাজ করার পর সালমান এবং মৌসুমীর ইগো প্রবলেম চরম আকার ধারন করে এবং দুজন দুজনের সাথে কাজ করা বন্ধ করে দেন। সালমানের তখন দরকার তার সাথে বয়স এবং অভিনয় দক্ষতায় ম্যাচ করবে, এমন একজন নায়িকা। চাঁদনী রাতের পর শাবনুর আরেকটি সুযোগ পেয়ে যান, কাজ করেন মন-প্রান ঢেলে। ছবির নাম স্বপ্নের ঠিকানা এবং এটি এখনো বাংলা ছবির ইতিহাসে সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবিগুলির একটা। সালমানের অকালমৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা ১৪টি ছবিতে একসাথে অভিনয় করেন। শাবনুরকে আর কখনোই পিছনে তাকাতে হয়নি।
শুধু কি প্রথম ছবির ব্যর্থতা? এটাতো কিছুই না। দীর্ঘ ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে যত ঝড়-ঝাপটা তার উপর এসেছে, যত স্ক্যান্ডাল তাকে ফেস করতে হয়েছে, পৃথিবীর কোন প্রান্তের কোন শিল্পীকেই বোধ করি ততটা হয়নি। তার জীবনকাহিনী নিয়ে একটা ছবি বানালে সেটি হয়ত তার অভিনীত যেকোন ছবির চাইতে বেশি ব্যবসা করবে।
আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সাথে একই সময়ে তার এবং তার মায়ের স্ক্যান্ডাল (আজিজ ভাই ছিলেন তার প্রথম প্রযোজক। এক রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সাথে উনি শাবনুরকে পরিচয় করিয়ে দেন এবং সবার সামনেই শাবনুরকে এবং তার মাকে চুমু খান!), বিবাহিত সালমান শাহর সাথে স্ক্যান্ডাল, মায়ের তৃতীয় বিয়ে, সালমানের হত্যা/আত্মহত্যার জন্য অভিযুক্ত হওয়া, একাধিকবার এফডিসির বিভিন্ন সমিতি কর্তৃক ব্যানড হওয়া, রিয়াজের সাথে স্ক্যান্ডাল এবং পরে ইগো ইস্যুতে তার সাথে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানো, ফেরদৌসের সাথে স্ক্যান্ডাল, আমেরিকার জনৈক যুবকের সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি পত্রিকায় প্রকাশ, বাবার মামলা (শাবনুরের বাবা তার বিরুদ্ধে সম্পত্তির অংশ চেয়ে মামলা করেন) ---উফফফ, কি হয়নি তার জীবনে! কি পেশাগত জীবনে, কি পারিবারিক জীবনে, সমস্যার সাথে বাস করেছেন প্রতিটা মুহুর্ত। অন্য যেকেউ বোধ হয় পাগল হয়ে যেত, সমস্যা ভুলে থাকার জন্য মাদকের আশ্রয় নিত বা আত্মহত্যা করত। তার ১৪টি সফল ছবির নায়ক সালমান তো শুধু পারিবারিক চাপ সহ্য করতে না পেরেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যান।
শাবনুর সব বাধা ডিঙ্গিয়েছেন তার অভিনয় দক্ষতা, পেশাগত নৈপুন্য দিয়ে। চরম অশ্লীলতার যুগেও মাথা নোয়াননি। নিজে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয় করা তো দুরের কথা, তার কোন ছবিতে কোন কাটপিস সংযোজনও করতে দেননি। সবকিছু মিলিয়েই তিনি আজ এক জীবন্ত কিংবদন্তী। শাবনুরের গল্প সব বাধা মাড়িয়ে সাফল্যের চুড়ায় ওঠা এক মহীয়সী নারী গল্প।